কেমন আছেন সবাই? আশা করি, ভালো আছেন।
আজ যে দেশটি নিয়ে লিখতে বসলাম অনেকেই এই দেশটিতে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
দেশটির নাম সুইজারল্যান্ড। ইউরোপে যদি বহুভাষার কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করতে হয় প্রথম দিকেই থাকবে সুইজারল্যান্ডের নাম। দেশটিতে চারটি জাতীয় ভাষা রয়েছে – জার্মান, ফ্রেন্স, ইতালিয়ান ও রোমান্শ। এছাড়া ইংরেজিও খুব জনপ্রিয়। সুইজারল্যান্ডকে বলা হয় ‘ওয়াটার টাউয়ার’ দেশটিতে প্রায় ১৫০০ এরও বেশি হ্রদ রয়েছে। পানি হচ্ছে সে দেশের শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস।
সুইজারল্যান্ড ঘড়ির জন্যও কম পরিচিত নয়! যারা ঘড়ি ব্যবহার করেন তারা অনেকেই Rolex, Cartier, Omega, Tissot, TAG Heuer, Swatch নামগুলোর সাথে পরিচিত। এসবই সুইস ব্র্যান্ড। ‘সুইস বাংক’ এর কথা কে না জানে! বিশ্বের অনেক অনেক কোটিপতিরা টাকা রাখেন এই ব্যাংকে। বিখ্যাত এই ব্যাংক এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেল এ অবস্থিত।
সুইজারল্যান্ডের University:
## দেশটিতে তিন ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এগুলো হলঃ
UNIVERSITY
UNIVERSITY OF APPLIED SCIENCES AND
ARTS
UNIVERSITY OF TEACHER EDUCATION
## দেশটিতে বেশকিছু প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এগুলোর মধ্যে:
1. ETH Zurich (13th)
2. École Polytechnique Fédérale de Lausanne (38th)
3. University of Zurich (90th)
4. University of Basel (94th)
5. University of Bern (113th) অন্যতম।
সকল সুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা এখানে পাবেনঃ
https://www.studyinswitzerland.plus/list-swiss-universities/
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর্স (৩ বছর মেয়াদী), মাস্টার্স (১.৫-২ বছর মেয়াদী), পিএইচডি (৩-৫ বছর মেয়দী), ও অন্যান্য প্রোগ্রাম অফার করে থাকে।
প্রয়জনীয় ডোকুমেন্টস:
# হাই স্কুল ডিপ্লোমা বা এটি সমতুল্য
# আবেদন ফর্ম (সাবধানে পূরণ এবং স্বাক্ষরিত)
# সনাক্তকারী নথির অনুলিপি বা আন্তর্জাতিক পাসপোর্ট এর ইনফরমেশন পেজ
# দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
# ভাষা দক্ষতার প্রমাণ (ইংরেজি, ফরাসী, জার্মান)
# ইংরেজি: টোফেল, আইইএলটিএস (প্রতিটি মডিউলে 5.5)
টিউশন ফি:
কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা বেশি টিউশন ফি নেয়। কার্যত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য, আপনাকে প্রতি সেমিস্টারে ৫০০ সুইস ফ্রাংক এবং ২০০০ সুইস ফ্রাংক এর মধ্যে অর্থ প্রদান করতে হতে পারে। মনে রাখবেন যে আরও ছোট ছোট ফি থাকতে পারে: নিবন্ধন ফি; পরীক্ষার ফি; সেমিস্টার ফি; সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া, গ্রন্থাগারের ব্যবহারের জন্য ফি; ছাত্র সমিতি ইত্যাদির জন্য ফি দিতে হতে পারে।
সুইজারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির আবেদনের সময়সীমা:
• ক) ফল সেমিস্টার: 1 ডিসেম্বর - 30 এপ্রিল
• খ) স্প্রিং সেমিস্টার: 1 মে - 30 নভেম্বর
ভর্তির আবেদনের প্রক্রিয়া:
ধাপ – ১: প্রোগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা। নিচের লিংক এ গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যম ও প্রোগ্রাম খুঁজতে পারেনঃ https://www.studyprogrammes.ch/en/start
ধাপ –2: ভর্তির যোগ্যতাবলী দেখে নেওয়া।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পদ্ধতি নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত এবং নিজস্ব ভর্তির মানদণ্ড নির্ধারণ করে। নির্দিষ্ট তথ্যের জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তির বিষয়ে কিছু সাধারণ তথ্য এখানে দেওয়া হল:
স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তি: অবশ্যই এইচএসসি পাশ থাকতে হবে।
মাস্টার্সের প্রোগ্রামে ভর্তি: যে কোন একটি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি।
ডক্টরাল/পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি: যে কোন একটি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ভাষার প্রয়োজনীয়তা:
যদিও সুইজারল্যান্ডে ইংরেজি মাধ্যমে স্নাতক করার সুযোগ সীমিত, তবে যেগুলোতে আছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় ভেদে
আইইএলটিএস ৬.৫ – ৭ লাগতে পারে। আবেদনের সময়সীমা বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
ধাপ – ৩: আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় আবেদনের সময়সীমা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ভর্তি পদ্ধতি এবং তালিকাভুক্তির বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা নিচের লিংক এ গিয়ে খুঁজতে পারেনঃ
https://www.studyinswitzerland.plus/university-types/
স্কলারশিপঃ
সুইজারল্যান্ডে বিভিন্ন ক্যাটাগরিরি স্কলারশিপ রয়েছে।
বিস্তারিতঃ https://www.studyinswitzerland.plus/scholarships/
ভিসা সংক্রান্ত তথ্য :
সুইস এমব্যাসি বাংলাদেশে থাকায় আপনাকে ভিসা আবেদনের জন্য ভারতে যেতে হবে না, যেটা অধিকাংশ দেশের জন্যই প্রয়োজন হয়। যেহেতু আপনি ইইউ সদস্যভুক্ত দেশের কেউ নন, তাই আপনাকে ন্যাশনাল ভিসার (ডি ভিসা) জন্য সুইস এমব্যাসি ঢাকা তে আবেদন করতে হবে।
ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
:https://www.sem.admin.ch/dam/data/sem/einreise/visumantragsformulare/visumantrag-visumd-en-de.pdf) , আবেদনকারীর স্বাক্ষর সহ পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৬ মাসের পুরনো নয়) – ছবি সম্পর্কে
আরও একটি অতিরিক্ত পাসপোর্ট সাইজ ছবি
পাসপোর্ট (পুরাতন সহ, যদি থাকে)
বর্তমান পাসপোর্ট এর ফটোকপি (প্রতিটি আবেদন ফর্ম এর জন্য)
সিভি ও মোটিভেশন লেটার
সকল একাডেমিক কাগজপত্র
অফার লেটার (সুইস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সত্যায়িত)
ঘোষণা পত্র যে, আপনি পড়াশোনা শেষে নিজ দেশে ফিরে আসবেন।
আর্থিক সচ্ছলতা (নিজ ব্যাংক একাউন্টে ২১০০০ সুইস ফ্রাংক এর সম পরিমাণ টাকা,
সূত্রঃ https://www.uzh.ch/cmsssl/en/studies/application/entry/guidelines.html
টাকা বাংলাদেশে অবস্থিত কোন ব্যাংক যার শাখা সুইজারল্যান্ডে আছে অথবা বাংলাদেশ অবস্থিত কোন সুইস ব্যাংকের শাখায় রাখতে হবে)
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা পরিক্ষায় পাশের নিশ্চিত পত্র
কমপক্ষে ১ বছরের টিউশন ফি পরিশোধের প্রমাণ কপি
সাম্প্রতিক আইইএলটিএস পরিক্ষার সনদ
স্পন্সর কর্তৃক হলফনামা (এফিড্যাভিট), যেখানে লেখা থাকবে যে, স্পন্সর আপনার সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনাকালীন সকল খরচ বহন করবেন।
আয়ের উৎস (১২ মাসের ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট/সনদ, ইনকাম ট্যাক্স পেপার, ফিক্সড জামানত ইত্যাদি)
যদি ব্যাংক লোন হয় (ব্যাংককে নিশ্চিত পত্র ইস্যু করতে হবে)
বিশেষ প্রয়োজনে এমব্যাসি অতিরিক্ত কাগজ চাইতে পারে।
সকল কাগজ অবশ্যই অরিজিনাল দিতে হবে। যাচাইয়ের পরে গুরুত্বপূর্ণগুলো ফেরত দিয়ে দিবে।
সকল কাগজ ক্লিপ দিয়ে সংযুক্ত করে দিতে হবে, স্ট্যাপল নয়।
২ সেট (অরিজিনাল ও ১ সেট ফটোকপি) দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ কাগজগুলোর (শিক্ষা সনদ ইত্যাদি) আলাদা ফটোকপি সেট দিতে হবে।
সকল কাগজ এমব্যাসি সুইজারল্যান্ডের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে।
সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে এমব্যাসিকে। ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ৮-১২ সপ্তাহ সময় নিতে পারে।
আরও বিস্তারিত জানতে এমব্যাসির ওয়েবসাইট ভিজিট
করুনঃ https://www.eda.admin.ch/countries/bangladesh/en/home.html
Embassy of Switzerland
Bay’s Edgewater
8th Floor,
Plot 12
North Avenue, Gulshan 2
Dhaka 1212
Bangladesh
Phone
Headquarters +880 255 051 601
Fax
Headquarters +880 255 051 614
থাকা-খাওয়া খরচ:
সুইজারল্যান্ড খুবই ব্যয়বহুল দেশ। থাকা-খাওয়া বাবদ আপনাকে কমপক্ষে ৭০০ – ১০০০ ইউরো গুনতে হবে। অবশ্য এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়।
পার-টাইম কাজ:
বিদেশী শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পেয়ে থাকে। তবে সামারে ফুল টাইম কাজ করতে পারবেন। সুইজারল্যান্ডে অবস্থানের পর কাজের অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে এবং ৬ মাস পরে কাজের অনুমতি পাবেন। অর্থাৎ ৬ মাস পর্যন্ত কোন কাজ করতে পারবেন না। যেহেতু সুইজারল্যান্ড সেঞ্জেনভুক্ত দেশ তাই, এর ভিসা দিয়ে আপনি যে কোন সেঞ্জেনভুক্ত দেশে যেতে পারবেন এবং অনধিক ৯০ দিন থাকতে পারবেন। পড়াশোনা শেষে চাকুরি খোঁজার জন্য ৬ মাসের ভিসা দেওয়া হয়।
লেখকঃ আর্কিমিডিস রায়।

No comments:
Post a Comment