স্পেনে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক আলোচনা……….
Study in Spain,
Spain সম্পর্কিত কিছু কথা:
স্পেন এর সাংবিধানিক নাম(Kingdom of Spain) এবং এটি পশ্চিম ইউরোপের ইউরোপীয়ান ইউনিয়নভুক্ত একটি সেঞ্জেন দেশ। মাদ্রিদ রাজধানী স্পেনের বৃহত্তম শহর এবং প্রধান সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। স্পেনের প্রধান প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বার্সেলোনা,বালেনছিয়া,ছারাগোছা,মুরছিয়া,আলিকান্তে,সেবিইয়া, মালাগা,বিক,বিলবাউ,বাইয়াডোলিড ইত্যাদি অন্যতম।
1. Universitat de Barcelona
2. Universidad Complutense de Madrid
3. Universitat de Valencia
4. Universidad de Le Rioja
5. Universidad de Granada
6. Universidad de Sevilla
শিক্ষার মান ও গ্রহণযোগ্যতা:
স্পেনের শিক্ষার মান খুবই উন্নত এবং এর ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। স্পেনে অনেক ইউনিভার্সিটি রয়েছে যেগুলো রেঙ্কিং এ অনেক এগিয়ে। এখানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারনত স্প্যানিশ ভাষায় পড়াশোনা করানো হয় আর সারা স্পেনের কিছু প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা যায়। তাই স্পেনে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হলে স্প্যানিশ ভাষার উপর ভালো দক্ষতা অর্জন করতে হয়। যাদের মাতৃভাষা স্প্যানিশ নয় তাদের সাধারনত স্প্যানিশে B1/B2 লেভেল সম্পন্ন করা লাগে স্নাতক আর স্নাকোত্তর কোর্সে পড়াশোনা করার জন্য।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
1. বিশ্ববিদ্যালয়ে ONLINE আবেদন ফর্ম এবং নিচের সব ডকুমেন্ট (কোর্স ভেদে) ONLINE এ Upload করতে হবে।
2. এসএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট।
3. এইচএসসি ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট।
4. ব্যাচেলর ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট (মাস্টার্স এ আবেদন করতে)।
5. নিজ বিশ্ববিদ্যালয়/বিভাগীয় প্রধান থেকে একটা সার্টিফিকেট নিতে হবে যেখানে উল্লেখ থাকবে যে সংশ্লিষ্ট ছাত্র/ছাত্রী নিজ দেশে সমাপ্তক্রিত স্নাতক কোর্স দ্বারা স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যায়নের যোগ্যতা রাখে (মাস্টার্স এ আবেদন এর ক্ষেত্রে)।
6. মাস্টার্স ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট (পিএইচডি এর আবেদনের জন্য)।
7. পাসপোর্ট কপি।
8. মোটিভেশন লেটার।
9. সিভি।
10. পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
11. কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তির জন্য সর্বশেষ বা স্নাতক পরীক্ষার নম্বরপত্র স্পেনের শিক্ষাব্যবস্থা সমতুল্য স্কেলে পরিমাপ করে তাONLINE এ ভর্তির আবেদনের সাথেই জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে নিচের লিংকে গিয়ে সর্বশেষ পরীক্ষা বা স্নাতক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর ও বিষয়সমূহONLINE এ ফর্ম এর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পুরন করে স্পেনের শিক্ষাব্যবস্থায় সমতুল্য স্কেলে পরিমাপ করে সাথে সাথে তা ডাউনলোড করা যায়।
http://www.mecd.gob.es/mecd/servicios-al-ciudadano mecd/catalogo/general/educacion/203615/ficha.html
12. ONLINE এ ভর্তির আবেদন ফি(ONLINE এ ভর্তির আবেদন ফি ভিসা কার্ড অথবা ব্যাংক ত্রান্সফার এর মাধ্যমে জমা দিতে হয়)।
Note- স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যেই কোর্সে ভর্তির আবেদন করা হবে সেই কোর্সের ভর্তির যোগ্যতার সর্বশেষ শিক্ষা সনদ, ত্রান্সক্রিপট বাংলাদেশে অবস্থিত নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর সবশেষে ঢাকায় অবস্থিত স্পেনের দূতাবাস থেকে সত্যায়িত করতে হয়। সত্যায়িত কপি ONLINE এ ভর্তির আবেদনের সাথে জমা দেওয়া ছাড়াও সত্যায়িত ফটোকপি কপি ভর্তির আবেদন এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ ডাকযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে হয়। স্পেনের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ONLINE এ ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়।
Language Proficiency
ইংরেজি মাধ্যমে পরতে হলে সাধারনত IELTS এ 5.5/6.0 – 7.0 স্কোর লাগে আর স্প্যানিশ মাধ্যমে পরতে হলে B1/B2 or DELE(Diploma of Spanish as a foreign Language, Certificate Issued by Cervantes Institute, Spain) DELE Intermediate or DELE B1/B2 লাগে।
– ONLINE এ স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের সময় সর্বশেষ শিক্ষা সমাপ্তির সার্টিফিকেট (যেই কোর্সে আবেদন করা হবে সেই কোর্সের ভর্তি যোগ্যতার) Homologation/ Equivalency এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিদিষ্ট ফরমে আবেনদ করতে হয় ভিসি বরাবর অথবা স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর ও আবেদন করা যায় এক্ষেত্রে একট ফি প্রদান করতে হয়। Homologation/Equivalency ভর্তির পর স্পেনে আসার পরও করা যায় ।
বিঃদ্রঃ বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ডকুমেন্টস ও যোগ্যতাসমূহ ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় ভর্তির জন্য ONLINE / SKYPE ইন্টারভিউ নেওয়া হয়।
স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের সময়
স্পেনে সাধারনত প্রতিবছর ডিপ্লোমা,স্নাতক,স্নাতকোত্তর ও গবেষণামূলক/PhD কোর্সে অক্টোবর থেকে শিক্ষাবছর শুরু হয়। তাই প্রতিবছর অক্টোবরের আগেই বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া
স্পেনে তিন ধাপে ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১ম ধাপে স্নাতক কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয় যা সাধারনত বছরের শুরুর(ফেব্রুয়ারী-জুন) দিকে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। স্নাতক কোর্স সাধারনত ২৪০ ক্রেডিট হয়ে থাকে যা ৪ বছর মেয়াদী। এখানে স্নাতক কোর্সের একটি বিষয় আছে আর তা হল স্নাতক ১ম বর্ষ শেষ করার পর একজন ছাত্র বা ছাত্রী একসাথে ডাবল ডিগ্রি বা ডাবল স্নাতক কোর্স করতে পারেন, এই ক্ষেত্রে ১ম স্নাতক কোর্সের সাথে ২য় স্নাতক কোর্সের বিষয়ের মিল থাকতে হবে, যেমন- কেউ বিবিএ কোর্স এ ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ১ম বর্ষ শেষ করার পর ফাইনান্স বা একাউন্টিং অথবা বিবিএ এর সাথে সামঞ্জস্য অন্য বিষয় নিয়ে একসাথে ডাবল স্নাতক কোর্স বা ডিগ্রিতে পড়তে পারবে আর তখন অতিরিক্ত আরো ৪০-৫০ ক্রেডিট নিতে হবে।
২য় ধাপে স্নাতকোত্তর কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয় যা সাধারনত বছরের মাঝখানের (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) দিকে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। স্নাতকোত্তর কোর্স সাধারনত ৬০-১২০ ক্রেডিট হয়ে থাকে যা ১-২ বছর মেয়াদী। স্পেনে ২-ধরনের স্নাতকোত্তর কোর্স আছে, একটি অফিসিয়াল মাস্টার্স যা স্পেনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমদিত এবং আরেকটি মাস্টার্স কোর্স হল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মাস্টার্স যা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি অনুমোদন করে থাকে।
৩য় ধাপে গবেষণামূলক/PhD কোর্সে ভর্তি নেওয়া হয় যা সাধারনত এপ্রিল-অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। গবেষণামূলক/PhD কোর্স সাধারনত 8-৫ বছর মেয়াদী।
বাংলাদেশে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা
বাংলাদেশে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষার জন্য কিছু ইন্সিটিউট রয়েছে বিশেষ করে আধুনিক ভাষা ইন্সিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ স্প্যানিশ ডিপার্টমেন্টে জুনিয়র এবং সিনিয়র কোর্স নামে ১বছর করে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু রয়েছে যা সাধারনত প্রতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে ভর্তির আবেদন গ্রহন করা হয়। তাছাড়া ঢাকার আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষাদান করা হয় যেমন ব্রাক ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি।
এখানে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত কিছু লিংক দেওয়া হল যেখানে স্প্যানিশ ভাষা শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় সম্বন্ধে জানা যাবে।
টিউশন ফি
এখানে সাধারনত প্রতিক্রেডিট হিসাবে টিউশন ফি ধরা হয়। ১ ক্রেডিট টিউশন ফি নন-ইউরোপিয়ান ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে ৫৫-৮০ ইউরো। তবে কিছু কিছু প্রোগ্রাম/কোর্স/ইউনিভার্সিটি তে টিউশন ফি আরও কম বা বেশি হতে পারে।
স্পেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিজস্ব আর্থিক অনুদান থাকে যা বিভিন্ন কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক অনুদান হিসাবে দেওয়া হয় পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে এই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া থাকে। নিচে কিছু লিংক দেওয়া হল যা আর্থিক অনুদান পেতে সহায়তা করবে।
ভিসা সংক্রান্ত তথ্য:
ভিসার জন্য আবেদন:
১। সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সঠিকভাবে তৈরি হয়ে গেলে কোর্স শুরুর ২-১ মাস আগেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় ঢাকায় অবস্থিত স্পেনের দুতাবাসে।
২। এমব্যাসির এপোয়েন্টমেন্ট এর জন্যে স্পেনের ঢাকায় নিজুক্ত দুতাবাসে যোগাযোগ করতে হয়।
৩। এপোয়েন্টমেন্ট এর দিন সকল ডকুমেন্টস নিয়ে এমব্যাসিতে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে হয়।
৪। এপোয়েন্টমেন্ট এর দিন সকল ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে ভিসা ফি ব্যাংকে জমা দিতে বলে ভিসার আবেদন গ্রহন করা হয় এবং ঐ দিন অথবা অন্য দিন ভিসা ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।
** ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত ৩ সপ্তাহ সময় লাগে।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস:
1. বৈধ পাসপোর্ট।
2. পূরণকৃত Visa অ্যাপ্লিকেশান ফর্ম।
3. পাসপোর্ট সাইজ ছবি ।
4. বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিঠি ও টিউশন পাঠানোর কাগজ।
5. ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট।
6. ফ্লাইট বুকিং টিকেট(এটা করতে কোন টাকা লাগে না, শুধু বুকিং দিবেন।
7. ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফি (স্কলারশিপ প্রাপ্তদের কোন ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফি দিতে হয় না)।
8. হেলথ ইস্যুরেন্স(যতদিন এর কোর্স ততদিনের হেলথ ইস্যুরেন্স করতে হবে)।
9. সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস ।
10. স্কলারশিপ লেটার(যদি পেয়ে থাকেন)।
11. ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সল্ভেন্সি (যিনি আপনার সকল খরচ বহন করবেন তার অর্থাৎ স্পন্সরের)
12. হাউজিং সার্টিফিকেট/ডকুমেন্ট(স্পেনে আসার পর যেখানে অবস্থান করবে সেই জায়গার ঠিকানা অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন স্থানের ঠিকানা যেখানে ছাত্রছাত্রী পড়াকালীন সময়ে অবস্থান করবে।
অতিরিক্ত ডকুমেন্টস:
– ট্রেনিং সার্টিফিকেট (যদি লাগে)।
– কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট (যদি লাগে)।
পার্ট-টাইম জব ও খরচ সংক্রান্ত তথ্য:
স্পেনের আইন অনুযায়ী বিদেশি শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। কিন্তু কাজ করে টিউশন ফি ও নিজের খরচ চালানো সম্ভব নয়। স্পেনে ৩বছর থাকার পর Temporary Resident Permit এর জন্য আবেদন করা যায় কিছু সর্তপূরণ সাপেক্ষে। স্পেনে থাকা-খাওয়া বাবদ মাসিক খরচ প্রায় ৪০০-৫০০ ইউরো, এটা নির্ভর করে শহর, ব্যক্তির লাইফ স্টাইল এর উপর।
আজ তাহলে এখানে শেষ করছি, পরবর্তীতে আপনাদের সামনে
হাজির হবো অন্য কোনও দেশ নিয়ে।
সে পর্যন্ত ভালো থাকা হয় যেন।

No comments:
Post a Comment