ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত আলোচনা।
সংক্ষেপে দেশ পরিচিতিঃ
ফিনল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে বাল্টিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ফিনল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত দেশগুলির একটি। হেলসিঙ্কি ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। অফিসিয়াল ভাষা ফিনিশ ও সুইডিশ। এর আয়তন ৩৩৮,৪২৪ বর্গ কিঃমিঃ এবং জনসংখ্যা ৫,৪৮৮,৫৪৩ ।
দেশটির সরকারি নাম ফিনল্যান্ড প্রজাতন্ত্র।
দেশটির শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের হওয়ায় উচ্চ-প্রযুক্তির শিল্পের জন্য দক্ষ মানবসম্পদের কোন সমস্যাই সেখানে হয়নি। এদিকে শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্বমানের হওয়ার বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদেরও বিশেষ আগ্রহ থাকে ফিনল্যান্ড পড়াশোনা করার। দেশটিতে ২০১৭ এর পূর্ব পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য টিউশন ফি লাগেতো না এবং কিন্তু ইউরোপের বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১৭ সাল থেকে টিউশন ফি চালু হয়েছে।
ফিনল্যান্ডের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়:
1. University of Turku
https://www.utu.fi/fi2. Aalto University
E-mail: admissions@aalto.fi
3. Tampere University of Technology
admissions@tut.fi
4. University of Eastern Finland
admissions@uef.fi
5. University of Helsinki
admissions@helsinki.fi
6. University of Lapland
hakijapalvelut@ulapland.fi
7. University of Oulu
admissions.officer@oulu.fi
8. University of Vaasa
information@uva.fi
শিক্ষা পদ্ধতিঃ
দুটি সেমিস্টারে ফিনল্যান্ডের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। এগুলো হচ্ছে-
Autumn সেমিস্টার: আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত
Spring সেমিস্টার: জানুয়ারি থেকে জুলাই
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ও মার্কসীটের ইংরেজি ভার্সন
সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র
ভাষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র
রিকমেন্ডেশন লেটার
মোটিভেশন লেটার
পাসপোর্টের ফটোকপি
সকল কাগজপত্র অবশ্যই একজন নোটারী পাবলিক কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে।
টিউশন ফিঃ ফিনল্যান্ডে টিউশন ফি সাধারণত প্রতি বছরে ৪০০০ – ২০০০০ ইউরো পর্যন্ত হয়ে থাকে। টিউশন ফি ইউনিভার্সিটি ও কোর্স ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
বিঃদ্রঃ - ২০১৭ সালের পূর্বে ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা ফ্রি ছিল। যে সকল শিক্ষার্থী অটাম ২০১৭ এর পূর্বে ভর্তি হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে টিউশন ফি দেওয়া লাগবে না অর্থাৎ ফ্রি পড়তে পারবেন। এই টিউশন ফি চালু হয়েছে ২০১৭ এর অটাম থেকে।
শিক্ষার মাধ্যমঃ
দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ইংরেজি কোর্স বাধ্যতামূলক হওয়ায় ফিনল্যান্ডের সবাই ইংরেজি ভাষার সাথে পরিচিত। ফিনল্যান্ডের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয় এমন কোর্স রয়েছে। ফলে ফিনিশ ভাষা না জেনেও বাইরের শিক্ষার্থীরা পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। ফিনিশ ভাষা একেবারে না শিখেও সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ফেলা সম্ভব।
ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউএএস-এ পড়াশোনা করার করতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকার প্রমাণ হিসেবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে TOEFL বা IELTS স্কোর প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের স্কোর চাওয়া হয় আর তাই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য জেনে নিতে হবে।
TOEFL এবং IELTS ছাড়া ভর্তিঃ
ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে TOEFL এবং IELTS স্কোর ছাড়াও অল্প কিছু ক্ষেত্রে ভর্তির সুযোগ থাকে, বিশেষ করে পূর্ববর্তী কোর্সে শিক্ষার মাধ্যমে ইংরেজি হলে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য জেনে নিতে হবে।
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তির যোগ্যতাঃ
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতা বিভিন্নরকম, তবে কিছু সাধারণ নিয়মের কথা বলা যায়।
বাইরে থেকে কোন শিক্ষার্থী ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হতে চাইলে শিক্ষার্থী তার নিজ দেশেও উচ্চ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির যোগ্যতা রাখেন এমন পড়াশোনা বা কোর্স সম্পন্ন করার সনদ প্রয়োজন হবে।
ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে।
স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তিঃ
মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও নিয়মকানুন অনেকটা একই রকম। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্র এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয় না।
ইউএস বা ইউনিভার্সিটি অব এপ্লায়েড সায়েন্স-এ মাস্টার্স কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয়। এখানকার মাস্টার্স কোর্সগুলো মূলত পেশাজীবীদের কথা মাথায় রেখেই পরিচালনা করা হয়।
মাস্টার্স শেষে ডক্টরাল/পিএইচডি লেভেলে পড়াশোনা ও গবেষণা কোর্সে ভর্তির আবেদন করা যায়।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম থাকায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে হবে।
ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তির জন্য এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। সাধারণত মাস্টার্স পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এন্ট্রান্স পরীক্ষার বদলে পূর্ববর্তী একাডেমিক কোর্সে শিক্ষার্থীর ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জিম্যাট স্কোর প্রয়োজন হয়।
এন্ট্রান্স পরীক্ষার ধরনঃ
বিভিন্ন বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেয়া হয়। কাজেই ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নার্সিং কোর্সে ভর্তির জন্য এন্ট্রান্স পরীক্ষার ধরন অবশ্যই ভিন্ন হবে। এটি লিখিত পরীক্ষা, তবে গান, নাটক ইত্যাদি ক্ষেত্রে পোর্টফোলিও তৈরির প্রয়োজন হতে পারে এমনকি অডিশনের জন্যও ডাকা হতে পারে।
বিঃদ্রঃ- যোগ্যতাসমূহ ইউনিভার্সিটি ও কোর্স ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
আবেদন প্রক্রিয়াঃ
আপনি সরাসরি যে কোন বিশ্বিবিদ্যালয়ের এডমিশন অফিসে মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও আবেদনপত্র সংগ্রহ করা যেতে পারে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অন-লাইনে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সাধারণত ১ বৎসর সময় হাতে রেখে শুরু করতে হয়।
সাধারণত আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার ৬-৮ মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
স্কলারশিপঃ
স্কলারশিপ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমনঃ সম্পূর্ণ টিউশন ফি ফ্রি, টিউশন+নিজের খরচ, টিউশন ফি’র কিছু অংশ ইত্যাদি।
১. ১০০% টিউশন ফি ওয়েভার + লিভিং কস্ট (আনুমানিক ৫০০ ইউরো)
এ ধরনের অল্প স্কলারশিপ থাকবে অনেক প্রোগ্রামে তবে সব প্রোগামে নয় । আর ২য় বছর পাবেন কিনা সেটার কিছু কন্ডিশন থাকতে পারে যেমন: মিনিমাম ক্রেডিটস, গ্রেডস ইত্যাদি।
২. ১০০% টিউশন ফি ওয়েভার
প্রতিটি প্রোগ্রামেই এরকম স্কলারশিপ থাকবে তবে কতজনকে দিবে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। তবে খুব বেশি ও যে হবেনা এটা শিওর। এই স্কলারশিপ ও ২য় বছর পাবেন কিনা সেটার কিছু কন্ডিশন থাকতে পারে যেমন: মিনিমাম ক্রেডিটস, গ্রেডস ইত্যাদি যেটা আগেই বলা হয়েছে ।
৩. পারশিয়াল টিউশন ফি ওয়েভার :
এই স্কলারশিপ এর পরিমান তুলনামূলকভাবে বেশি হবার সম্ভাবনা বেশি। এটা হতে পারে ৭৫% অথবা ৫০% অথবা ২৫% ওয়েভার।
ভিসা প্রক্রিয়াঃ
রেসিডেন্স পারমিট/ভিসা আবেদনের জন্য আপনাকে ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত ফিনিশ এমব্যাসিতে যেতে হবে।
ভিসা আবেদনের বিস্তারিত তথ্যঃ https://migri.fi/en/residence-permit-application-for-studies
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
১। বৈধ পাসপোর্ট
২। ভিসা আবেদনের ফর্ম
৩। ভার্সিটির অফার লেটার
৪। পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি (সাইজ এমব্যাসির ওয়েবসাইটে দেখুন)
৫। ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট। ব্যাংকে নিজের একাউন্টে ১৩,৪৪০ ইউরো (২ বছরের পারমিট এর জন্য) আর ৬৭২০ ইউরো (১ বছরের পারমিট এর জন্য) রাখতে হবে অর্থাৎ প্রতি মাসে ৫৬০ ইউরো করে । যদি থাকার খরচ ভার্সিটি বহন করে তাহলে ২৮০ ইউরো প্রতি মাসে, আর যদি থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করে তাহলে প্রতি মাসে ১৯৫ ইউরো করে যত বছরের পারমিটের জন্য আবেদন করবেন তত দিনের দেখাতে হবে।
৬। ইনকাম এর উৎস
৭। পিতা-মাতা কে স্পন্সর হিসেবে দেখান সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাগজপত্র দেখাতে হতে পারে। তবে পিতা-মাতা ছাড়া অন্য কেউ স্পন্সর হতে পারবে না।
৮। টিউশন ফি পরিশোধের প্রমাণ
৯। ইন্স্যুরেন্স
১০। চাকুরির অভিজ্ঞতা (যদি থাকে)
আজ তাহলে এখানে শেষ করছি, পরবর্তীতে আপনাদের সামনে
হাজির হবো অন্য কোনও দেশ নিয়ে।
হাজির হবো অন্য কোনও দেশ নিয়ে।
সে পর্যন্ত ভালো থাকা হয় যেন।(আর হ্যা নিউজ টি যদি আপনার কোনো উপকারে আসে তাহলে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন এবং শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের জানিয়ে দিতে ভুলবেন না।)
ARKIMIDIS RAY

No comments:
Post a Comment